পাঠ ৮: নেটওয়ার্কের ধারণা

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - কম্পিউটার নেটওয়ার্ক | NCTB BOOK

দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম দিয়ে একসাথে জুড়ে দিলে যদি তারা নিজেদের ভেতর তথ্য কিংবা উপাত্ত আদান-প্রদান করতে পারে- তাহলেই আমরা সেটাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে পারি। বুঝতেই পারছ সত্যিকারের নেটওয়ার্কে আসলে দু-তিনটি কম্পিউটার থাকে না। সাধারণত অনেক কম্পিউটার থাকে। আজকাল এমন হয়ে গেছে যে, কেউ একটা কম্পিউটার কিনলে যতক্ষণ না সেটাকে একটা নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দিতে পারে, ততক্ষণ তার মনে হতে থাকে কম্পিউটার ব্যবহারের আসল কাজটিই বুঝি করা হলো না। তার কারণ হচ্ছে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে যখন তথ্য দেওয়া নেওয়া হয়, তখন একটা অনেক বড় কাজ হয়। একজন ব্যবহারকারী তখন নেটওয়ার্কের অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারে। যে রিসোর্স তার কাছে নেই, সেটিও সে নেটওয়ার্ক থেকে ব্যবহার করতে পারে।

একটি নেটওয়ার্ক

 

নেটওয়ার্কের পুরোপুরি ধারণা পেতে হলে নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক আছে এরকম কিছু যন্ত্রপাতির কথা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

সার্ভার : সার্ভার নাম শুনেই বুঝতে পারছ এটা serve করে। অর্থাৎ সার্ভার হচ্ছে শক্তিশালী কম্পিউটার যেটি নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারকে নানা রকম সেবা দিয়ে থাকে। একটি নেটওয়ার্কে কিন্তু একটি নয় অনেকগুলো সার্ভার থাকতে পারে।

কারেন্ট : কেউ যদি অন্য কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সেবা নেয়, তখন তাকে ক্লায়েন্ট বলে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও ক্লায়েন্ট শব্দটির অর্থ মোটামুটি সেরকম। যে সব কম্পিউটার সার্ভার থেকে কোনো ধরনের তথ্য নেয় তাকে ক্লায়েন্ট বলে। যেমন মনে কর, তুমি তোমার কম্পিউটার থেকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ই-মেইল পাঠাতে চাও। তাহলে তোমার কম্পিউটার হবে ক্লায়েন্ট। নেটওয়ার্কের যে কম্পিউটারটি “ইমেইল পাঠানোর কাজটুকু তোমার জন্য করে দেবে সেটা হবে সার্ভার”- এ ক্ষেত্রে এ সার্ভারটি হল ইমেইল সার্ভার।

একটি সার্ভার

মিডিয়া : যে বস্তু ব্যবহার করে কম্পিউটারগুলো জুড়ে দেওয়া হয় সেটা হচ্ছে মিডিয়া। বৈদ্যুতিক তার, কো-এক্সিয়াল তার, অপটিক্যাল ফাইবার ইত্যাদি মিডিয়া হতে পারে। কোনো মিডিয়া ব্যবহার না করেও তার বিহীন (যেমন- Wi-Fi) পদ্ধতিতে কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে জুড়ে দেওয়া যায়।

নেটওয়ার্ক এডাপ্টার : একটি কম্পিউটারকে সোজাসুজি নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দেয়া যায় না। সেটি করার জন্য কম্পিউটারের সাথে একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC) লাগাতে হয়। সেই কার্ডগুলো তখন মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটারকে দিতে পারে। আবার কম্পিউটার থেকে তথ্য নিয়ে সেটি নেটওয়ার্কে ছেড়ে দিতে পারে।

রিসোর্স : ক্লায়েন্টের কাছে ব্যবহারের জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তার সবই হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটারের সাথে যদি একটি প্রিন্টার কিংবা একটি ফ্যাক্স মেশিন লাগানো হয় সেটি হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটার দিয়ে কেউ যদি সার্ভারে রাখা একটি ছবি আকার সফটওয়ার ব্যবহার করে সেটিও রিসোর্স। যারা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা শুধু যে রিসোর্স গ্রহণ করে তা নয়, তোমার কাছে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে বা মজার ছবি থাকে এবং সেটি যদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যরাও ব্যবহার করতে থাকে তাহলে তোমার কম্পিউটারও একটি রিসোর্স হয়ে যাবে।

ইউজার : সার্ভার থেকে যে ক্লায়েন্ট রিসোর্স ব্যবহার করে, সে-ই ইউজার (user) বা ব্যবহারকারী।

প্রটোকল : ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে হলে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের যোগাযোগ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম মেনেই তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। যারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা আগে থেকেই ঠিক করে নেয়, কোন ভাষায়, কোন নিয়ম মেনে এক কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করবে। এই নিয়মগুলোই হচ্ছে প্রটোকল। যেমন- ইন্টারনেটে ওয়েব পেজ ব্রাউজ করার জন্য প্রটোকল হলো hypertext transfer protocol (http)।

গলগত কাজ : তোমাদের স্কুলের কম্পিউটারগুলোকে নেটওয়ার্কিং-এর আওতায় আনার জন্যে কী কী রিসোর্সের প্রয়োজন! একটি তালিকা তৈরি কর।

মজুন শিখলাম : সার্ভার, ক্লারেন্ট, মিডিয়া, মেটওয়ার্ক এডস্টার, রিসোর্স, ইউজার, প্রটোকল, HTTP । 

Content added By
Promotion